মধু না চিনি কোনটা ভালো? যদি কেউ এই প্রশ্ন করে, স্পষ্টতই সবাই বলবে মধু ভালো। কিন্তু সবাই কি জানেন মধু কেন ভালো?
আমরা জানি যে মধু চিনির চেয়েও মিষ্টি। চিনিতে 50% গ্লুকোজ এবং 50% ফ্রুক্টোজ থাকে যেখানে মধুতে প্রায় 35% গ্লুকোজ এবং প্রায় 40% ফ্রুক্টোজ থাকে। অর্থাৎ মধুতে চিনির চেয়ে কম ফ্রুক্টোজ থাকে। এই জন্য মধু শরীর দ্বারা চিনির চেয়ে বেশি ধীরে ধীরে শোষিত হয়। এর মানে মধু চিনির তুলনায় শক্তি বেশি সময় ধরে রাখে। এই সুবিধা কি তাহলে শুধুমাত্র কম ফ্রুক্টোজ লেভেল থাকার কারণে? উত্তরটি হল “হ্যাঁ”। অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোজ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ফ্রুকটোজ VLDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় যা বিভিন্ন অঙ্গের চারপাশে চর্বি তৈরি করে। এই বর্ধিত কোলেস্টেরল ধমনীগুলিকেও ব্লক করতে পারে যা শেষ পর্যন্ত হার্ট ফেইলিওর (heart failure) বা হার্ট ডিজিসের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ উচ্চ রক্তচাপ এবং ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে এবং প্রদাহের কারণও হতে পারে। তাই উচ্চতর ফ্রুক্টোজ মাত্রা বিপজ্জনক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল চিনির তুলনায় মধুর GI মান কম। এর মানে হল মধু রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না কারণ এর ফ্রুক্টোজ লেভেল কম থাকে। তাছাড়া মধুতে কিছু ট্রেস উপাদান, ভিটামিন ইত্যাদিও থাকে।
মধুতে উপস্থিত উপাদানসমূহ | গড় পরিমাণ(%) |
পানি | ১৭.২ |
ফ্রুক্টোজ | ৩৮.১৯ |
গ্লুকোজ | ৩১.২৮ |
সুক্রোজ | ১.৩১ |
ম্যাল্টোজ | ৭.৩১ |
ফ্রি গ্লুকোনিক এসিড | ০.৪৩ |
ল্যাকটোন | ০.১৪ |
নাইট্রোজেন | ০.০৪১ |
মিনারেল | ০.২ |
প্রোটিন | ০.৩ |
pH মান | ৩.৯ |
অ্যাশ | ০.১৬৯ |
ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রতিদিন 2 টেবিল চামচ মধু স্বাস্থ্যকর, তবে 2 টেবিল চামচের বেশি যেন না হয়। আমরা চায়ে চিনির পরিবর্তে মধু যোগ করতে পারি বা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারি যা কাশির জন্য খুবই উপকারী এবং এটি অতি সাধারণ একটি চিকিৎসা। মধু ঘুমের মানও উন্নত করতে পারে। মধুতে থাকা চিনি ট্রিপটোফ্যানকে নিয়াসিনে এবং নিয়াসিনকে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত করে। সেরোটোনিন আমাদের মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে। পরে, সেরোটোনিন মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয় যা আমাদের ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। মধু খুশকিরও চিকিৎসা করে। মধুতে অতি ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদের ত্বককে আরো চমৎকার ও উজ্জ্বল করে তোলে।
তবে, মনে রাখবেন মধু এবং চিনি উভয়ই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিষাক্ত। কিন্তু কিছু গবেষণা বলছে নির্দিষ্ট কন্ডিশনে মধুর পরিমিত সেবন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে । আর যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের মধু খাওয়া উচিত নয়। এবং পাস্তুরিত মধু এড়ানোর চেষ্টা করুন কারণ এতে পরাগ এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া (সরাসরি মৌমাছি থেকে প্রাপ্ত) রয়েছে যা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
Similar contents:
1.চা যেভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
Pingback: Is sugar a drug? – awesomeBiochem