রাতে ঘুম আসে না বা রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় এটি এখন খুবই কমন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জেনারেশন এর মধ্যে।
একদিন আমার এক ছাত্রের মা আমাকে বলছিলেন তার ছেলেকে সময়মতো ঘুমানোর বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিতে। তিনি বলেন, তার ছেলে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে এবং সময়মতো খায় না। পরদিন আরেক অভিভাবক তার ছেলের একই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করছিলেন যাতে আমি তাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের উন্নতি হয়। পরে যখন আমি ছাত্রদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, দুইজনের জবাবই প্রায় একইরকম ছিল। দুজনেই বলেছিল, “মাঝরাত পর্যন্ত আমাদের চোখে ঘুম না আসলে আমরা কী করব?” আমি তাদের বলেছিলাম যে এটি একটি খুব সাধারণ সমস্যা আমাদের বেশিরভাগেরই ঘটে। এমনকি মাঝে মাঝে আমি নিজেও গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারি না। এটা নয় যে আমি অসুস্থ বা অন্য কিছু, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করি তবুও আমি ঘুমাতে পারি না বা মাঝে মাঝে আমি কোন কারণ ছাড়াই মাঝরাতে জেগে উঠি। এটা খুব সাধারণ একটা বিষয় এবং এটি সবার ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। তবে এটি একটি সমস্যায় পরিণত হতে পারে যদি প্রতিদিন বা দীর্ঘদিন যাবত এই ঘটনাটি চলতে থাকে। এতে আমাদের মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই প্রভাবিত হতে পারে।
কারো ঘুমের সমস্যা হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আপনার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা, অসুস্থতা বা কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা নেই তবুও আপনার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। এই ঘটনাটিকে প্রায়ই ‘ Primary insomnia ‘ নামক একটি ঘুমের ব্যাধি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কখনও কখনও এটি আমাদের খাদ্যের সাথেও সম্পর্কিত থাকে।
কেন রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়ঃ
ঘুমের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি কাজ করে। তাই সারা রাত মস্তিষ্কের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। মস্তিষ্কের শক্তির প্রধান উৎস হল গ্লুকোজ যা প্রতি বেলার খাবার থেকে আসে এবং লিভারে গ্লাইকোজেন হিসেবেও জমা থাকে। আমাদের দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং এই ঘুমের সময়কালীন আমাদের কোন কিছু খাওয়া হয়ে ওঠে না। আমরা রাতের খাবারে যে খাবারটুকু খাই তা দিয়েই আমাদের মস্তিষ্ক সারা রাত গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ করে। ফলে সারা রাত ব্যাপী শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে থাকে। কিন্তু মস্তিষ্ক কম গ্লুকোজ মাত্রার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। তাই যখন শরীরে গ্লুকোজ ফুরিয়ে যায় তখন মস্তিষ্ক গ্লুকোজের প্রয়োজন মেটাতে লিভার থেকে গ্লাইকোজেন গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবে, গ্লাইকোজেনের মাত্রাও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এখন ভাবুন যদি গ্লাইকোজেনের মাত্রাও স্টকের বাইরে চলে যায় তাহলে কী হবে। আমাদের লিভারে এক কালীন 75-100 গ্রাম গ্লাইকোজেন জমা থাকতে পারে এবং আমাদের শরীর প্রতি ঘন্টায় 10 গ্রাম গ্লাইকোজেন গ্রহণ করে। তাই ৮ ঘন্টার জন্য মস্তিষ্কে গ্লাইকোজেন সরবরাহ করতে আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে গ্লাইকোজেন সংরক্ষণের প্রয়োজন। যদি গ্লাইকোজেনের মাত্রা খুব কম হয়ে যায় তবে মস্তিষ্ক আরও শক্তির জন্য শরীরকে জেগে ওঠার সংকেত দেয়। এই কারণেই মাঝে মাঝে মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এবং ক্ষুধার্ত লাগে।
সমাধানঃ
অনেকেই আছে রাতে খায় না। আমরা যদি রাতে না খাই তার মানে আমরা মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ সরবরাহ করছি না এবং মস্তিষ্ক তাড়াতাড়ি গ্লাইকোজেন গ্রহণ করতে শুরু করবে। আবার যদি রাতের খাবার খাই কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে, আমাদের ঘুমের এক পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্কও গ্লাইকোজেন গ্রহণ করতে শুরু করবে এবং আমাদের জাগিয়ে তুলবে। তাই সময়মতো খাওয়া ও ঘুমানো খুবই জরুরি। এখন কারো যদি রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে সেক্ষেত্রে কি হবে? তাদের জন্য একটি সমাধান আছে। তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেতে পারেন। মধু ইনসুলিনের মাত্রা কিছুটা বাড়ায় এবং ট্রিপটোফ্যানকে(tryptophan) মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে দেয়। ট্রিপটোফ্যান পরবর্তীতে নিয়াসিনে(niacin) রূপান্তরিত হয় এবং তারপর নিয়াসিন সেরোটোনিনে(serotonin) রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের মেজাজকে সতেজ রাখে। সেরোটোনিন মেলাটোনিন(melatonin) তৈরি করে । মেলাটোনিন একটি রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের শরীরকে ঘুমাতে জানান দেয়। মেলাটোনিন ঘুমের দৈর্ঘ্য এবং গুণমান নির্ধারণ করে। তাই যাদের রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস তারা এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে ভালো ঘুমাতে পারেন। ডাক্তাররাও মাঝে মাঝে এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
Similar contents:
1.রাতে ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয়
2.প্রস্রাবের রং কালো হতে পারে? একটি জেনেটিক রোগ
Pingback: Sc ও Zn অবস্থান্তর মৌল নয় কেন? | Simple & easy - awesomeBiochem
Pingback: সাবান প্রস্তুতি সোডিয়াম স্টিয়ারেট বিক্রিয়া সহ awesomeBiochem