গ্লুকোজ কিভাবে দেহে নিয়ন্ত্রিত হয়?
মানবদেহ পৃথিবীর অন্যতম জটিল একটি জিনিস। এটি একটি মেশিনের মতো যা জ্বালানী ছাড়া কাজ করে না। আর সেই জ্বালানি হল গ্লুকোজ। আমাদের শরীর সম্পূর্ণরূপে গ্লুকোজের উপর নির্ভরশীল। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে অঙ্গটি সেটি হলো মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্ক-ই আমাদের শরীরের সমস্ত কাজ পরিচালনা করে আর এই মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে গ্লুকোজ এর উপর। মস্তিষ্ক চালানোর জন্য গ্লুকোজের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও, প্রতিটি অঙ্গ, প্রতিটি টিস্যু, কোষে শক্তি উৎপাদন করার জন্য জ্বালানী হিসাবে গ্লুকোজ প্রয়োজন যাতে আমাদের শরীর শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবে কাজ করতে পারে। আর এই গ্লুকোজ সরবরাহ করতে আমাদের খেতে হবে। আমরা যা খাই তা আমাদের শরীর সাধারণ গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে এবং সারা শরীরে বিতরণ করে। আশ্চর্যজনক ঘটনা হল যে আমাদের শরীর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে জানে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন আমাদের পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য খালি থাকে যেমন আমরা যখন রোজা রাখি তখন আমাদের পেট ভরা অবস্থার তুলনায় আমাদের শরীর ভিন্নভাবে কাজ করে। আমাদের শরীর জানে কখন গ্লুকোজ তৈরি করতে হবে এবং কখন তা সংরক্ষণ করতে হবে। মানবদেহ কিভাবে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
পেট ভরা অবস্থাঃ
যেহেতু আমরা যা খাই সবই গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, তার মানে খাওয়ার মাধ্যমে আমরা শরীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করছি। যখন আমাদের পেট ভরা থাকে তার মানে ভালোভাবে খাওয়া হয়েছে ওই মুহূর্তে শরীরে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ আছে। তাই আর গ্লুকোজ তৈরি না করে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য গ্লুকোজ সংরক্ষণ করতে হবে। এই কারণে শরীর তখন গ্লুকোজ উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং এই গ্লুকোজকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং সংরক্ষণ করা যায় তার প্রক্রিয়া শুরু করে।

উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে যে কিভাবে আমাদের শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করার পথ বেছে নেয়। আমরা জানি গ্লুকোজ ভাঙ্গলে শক্তি উৎপন্ন হয়। তাই শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোজ পাইরুভেটে পরিণত হয়। পাইরুভেট তারপর মাইটোকন্ড্রিয়ায় প্রবেশ করে এবং এসিটাইল-কোএ তে রূপান্তরিত হয়। Acetyl-CoA তারপর TCA চক্রে অংশগ্রহণ করে যেখান থেকে ATP (শক্তি) উৎপন্ন হয়। আমাদের শরীর এই ATP কে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে সব ধরনের সেলুলার এবং জৈব রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপের পাশাপাশি শারীরিক কার্যকলাপ করতে সক্ষম হয়।
অবশিষ্ট গ্লুকোজ অন্য আরেকটি পাথওয়েতে গিয়ে গ্লাইকোজেন উৎপাদন করে এবং গ্লুকোজ এই গ্লাইকোজেন রূপে লিভারে সংরক্ষিত থাকে। গ্লাইকোজেন হল লিভারে সঞ্চিত গ্লুকোজের প্রধান স্টোরেজ ফর্ম। আমাদের শরীরে গ্লুকোজ ফুরিয়ে গেলে গ্লাইকোজেন কাজে আসে। আমাদের শরীর চর্বি হিসাবেও গ্লুকোজ জমা করতে পারে। এইভাবে আমাদের শরীর পেট ভরা অবস্থায় গ্লুকোজ ব্যবহার করে এবং এর মাত্রা বজায় রাখে। কিছু এনজাইম আছে যা এই ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্ষুধার্ত অবস্থা:
ধরুন আমাদের দুপুর 2 টায় দুপুরের খাবার এবং 11 টায় রাতের খাবার খাওয়ার সময়সূচী রয়েছে এবং এর মাঝে আর কিছুই খাওয়া হয় না। সুতরাং, দুপুরের খাবারের মাধ্যমে আমরা যে শক্তি পাব তা পুরো সময় জুড়ে ব্যবহৃত হবে। আমরা যদি এর মধ্যে অন্য কিছু না নিয়ে কাজ করতে থাকি, তাহলে আমাদের শরীরের সমস্ত গ্লুকোজ এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যাবে এবং আমারা দ্রুত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ব। আমরা যদি ক্ষুধার্ত হই এবং তারপরও কিছু না খাই, তাহলে আমাদের শরীর পূর্বের মেকানিজম চেঞ্জ করে Starve-fed state এ যাওয়ার চেষ্টা করবে যেখানে আমাদের শরীর সমস্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহের পথ বেছে নেবে।

যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকি, উদাহরণস্বরূপ 12-15 ঘন্টা বা তারও বেশি, তখন আমাদের শরীর থেকে গ্লুকোজ চলে যায় এবং প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহ করার জন্য শরীর গ্লাইকোজেন ব্যবহার করে যা আগে পেট ভরা অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। গ্লুকোজ উৎপাদনের আরেকটি উপায় হল শরীরের চর্বি (এডিপোজ টিস্যুতে) যেটাও পূর্বে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে অ্যাডিপোজ টিস্যু ফ্যাটি অ্যাসিড হিসাবে চর্বি নির্গত করে যা ফলস্বরূপ গ্লুকোজ তৈরি করে। ল্যাকটেট পাইরুভেটে রূপান্তরিত হয় যা গ্লুকোজ উৎপাদন করে। অর্থাৎ ক্ষুধার্ত অবস্থায় সুস্বাস্থ্যের পুরো প্রক্রিয়াটি বিপরীত হয়ে যায়।
এইভাবে শরীর আমাদের মস্তিষ্ক এবং আমাদের শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনকে সচল রাখতে গ্লুকোজের মাত্রা এবং শক্তি উৎপাদন বজায় রাখে।
Similar contents:
1.শ্বসন কি? কীভাবে CO2 এবং O2 এর পরিবহন ঘটে?
Pingback: What is Gluconeogenesis | How gluconeogenesis is regulated | easy and simple – awesomeBiochem
Pingback: শ্বসন কি? কীভাবে CO2 এবং O2 এর পরিবহন ঘটে - awesomeBiochem