ভিটামিন সি এর কাজ (অ্যাস্করবেট)
- কোলাজেন হাইড্রক্সিলেজ:
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ন্যাসেন্ট কোলাজেনে প্রোলিন এবং লাইসিনের অবশিষ্টাংশের হাইড্রোক্সিলেশনের জন্য অপরিহার্য এবং স্বাভাবিক ট্রিপল হেলিক্স গঠনের জন্য হাইড্রোক্সিপ্রোলিন ব্যাকবোন গঠন করে এবং স্বাভাবিক কোলাজেন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোক্সিলাইসিন ক্রস-লিংকেজ তৈরি করে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের ঘাটতির কারণে কোলাজেন সংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে অথবা কোলাজেন মাত্রা অতিরিক্ত হারে বাড়তে থাকে।
- কার্নিটাইন জৈব সংশ্লেষণ:
লাইসিন থেকে কার্নিটাইনের জৈব সংশ্লেষণে দুটি অ্যাসকরবেট নির্ভর হাইড্রোক্সিলেশন বিক্রিয়া জড়িত থাকে যেখানে কো-সাবস্ট্রেট এবং কোফ্যাক্টর কোলাজেন সংশ্লেষণের মত একই রকম। কার্নিটাইন দীর্ঘ চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড মাইটোকন্ড্রিয়া পরিবহনে এবং শক্তি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের ঘাটতির কারণে কঙ্কাল এবং হৃদপিণ্ডের পেশীতে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দেয় এবং কার্নিটাইন এর মাত্রা হ্রাস করে।
- ক্যাটেকোলামিন জৈবসংশ্লেষণ:
অ্যাসকরবেট ক্যাটেকোলামিন সংশ্লেষণ করে দুটি মিক্সড ফাংশন অক্সিডেস এর মাধ্যমে- 1. ডোপামিন বিটা-হাইড্রোক্সিলেস 2. প্যারা-হাইড্রক্সি-ফিনাইল-পাইরুভেট অক্সিডেস।
- লোহা এবং তামার সাথে অ্যাসকরবেটের মিথস্ক্রিয়া:
অবস্থান্তর ধাতু Fe(III) বা Cu(II) এর উপস্থিতিতে অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে কোষকে রক্ষা করতে অ্যাসকরবেট মুখ্য ভূমিকা পালন করে । অ্যাসকরবেট উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি(ROS) (°OH, O2-, H2O2 এবং ফেরিল আয়ন) তৈরি করতে পারে। অ্যাসকরবেট Fe(III) এবং Cu(II) কে বিজারিত করে Fe(II) এবং Cu(I) এ রুপান্তরিত করে এবং অক্সিজেনকে O2- এবং H2O2-তে রুপান্তর করে। কার্নিটাইন এবং কোলাজেন সংশ্লেষণ, টাইরোসিনের ক্যাটাবোলিজম, নরএড্রেনালিন এবং নিউরোপেপটাইড সংশ্লেষণের মতো অ্যাসকরবেটের অনেক বিপাকীয় কার্যে এই বিজারণ বিক্রিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
- ইমিউন ফাংশন:
ভিটামিন সি ফ্যাগোসাইট এবং লিম্ফোসাইট ইমিউন কোষে শারীরবৃত্তীয় ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি টি-লিম্ফোসাইটের প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং কোষে ইন্টারফেরনের উৎপাদন বাড়ায়। ভিটামিন সি-এর অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ভুমিকা পালন করে
- স্কার্ভি প্রতিরোধ করে
- খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়
- ফুড অ্যাডিটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়
ভিটামিন সি এর অভাবজনিত জটিলতাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- রুক্ষ ত্বক
- জয়েন্টে ব্যথা
- সহজে ক্ষত সৃষ্টি
- পেঁচানো লোম
- চামচ আকৃতির নখ
- দুর্বল হাড়
- চুলের ফলিকল লাল হয়ে যাওয়া
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া
- মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
- দাঁতের ক্ষয়
- শারীরিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভাব
- ওজন বেড়ে যাওয়া
ভিটামিন সি পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন গ্রুপের সদস্য যা বিভিন্ন ধরণের খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায় এমনকি সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও বিক্রি করা হয়। ভিটামিন সি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। বেশিরভাগ প্রাণীই নিজ দেহে ভিটামিন সি তৈরী করতে সক্ষম। তবে মানুষ, বানর, বাদুর এবং অন্যান্য আরো কিছু প্রাণী আছে যারা ভিটামিন সি তৈরী করতে পারে না ফলে অবশ্যই খাদ্য উৎস বা সাপ্লিমেন্ট এর মাধ্যমে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে হয়।
ইতিহাসঃ
১৯০৭ সালে প্রথম নরওয়ের দুজন চিকিৎসক Axel Holst ও Theodor Frolich অ্যান্টিসকরবিউটিক ফ্যাক্টর আবিষ্কার করেন যা স্কার্ভি প্রতিরোধ করে। ১৯২৮ সালে এই ফ্যাক্টরটির নাম দেয়া হয় ‘পানিতে দ্রবণীয় সি’ বা ভিটামিন সি কিন্তু এর রাসায়নিক গঠন তখনও আবিষ্কার হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৩৩ সালে Walter Norman Haworth রাসায়নিক ভাবে ভিটামিন সি সনাক্ত করেন সংশ্লেষণ করেন। এটিই তৈরী করা প্রথম ভিটামিন ছিল। ১৯৩৭ সালে Haworth তার কাজের জন্য নোবেল প্রাইজ অর্জন করেন।
আমেরিকান বায়োকেমিস্ট Irwin Stone ভিটামিন সি এর খাদ্য সংরক্ষণকারী বৈশিষ্ট্য প্রথম আবিষ্কার করেন এবং পরবর্তীতে তিনি একটি তত্ত্বের মাধ্যমে দেখান যে মানুষ একটি মিউটেটেড জিন ধারণ করে যেটা L-gulonolactone oxidase কোড করতে সক্ষম।
ভিটামিন সি এর খাদ্যের উৎস:
ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস হল শাকসবজি এবং ফলমূল বিশেষ করে-
- পালং শাক
- টমেটো
- আলু
- ব্রকলি
- স্ট্রবেরি
- কমলালেবু
- কাঁচামরিচ
- অন্যান্য সাইট্রাস ফল
আলুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ কম থাকে, তবে যেসব অঞ্চলে আলু প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় সেখানে এটি মানুষের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য খাদ্যতালিকাগত উৎস হতে পারে। মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
দ্রষ্টব্য: খাবার বা ফলমূলে ক্ষত থাকলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। রান্না করা খাবার যে কোনো সময়ের জন্য সংরক্ষণ করলে ভিটামিন সি কমে যাবে। খাবারের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি-এর পরিমাণও ধীরে ধীরে কমে যায়।
অ্যাসকরবিক এসিডের(ভিটামিন সি) বিপাক ক্রিয়া:
অ্যাসকরবিক এসিড হল একটি ক্রিস্টাল সুগার এবং এটি প্রাইমেট, গিনিপিগ, ভারতীয় ফল ভক্ষণকারী বাদুড় এবং কিছু পাখি ছাড়া বেশিরভাগ জীবের D-glucose অথবা D-galactose থেকে সংশ্লেষিত হতে পারে।
প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ভিটামিন সি হল L-xylo-ascorbic acid। কপার, তাপ বা হালকা ক্ষারীয় অবস্থায় L-xylo-ascorbic acid জারিত হয়ে L-dehydroascorbic acid এ পরিণত হয়। L-ascorbic acid এবং L-dehydroascorbic acid উভয়ই ভিটামিন সি-এর শারীরবৃত্তীয়ভাবে সক্রিয় রূপ। L-dehydroascorbic acid পরবর্তীতে জারিত হয়ে আরও 2,3-diketo-l-gulonic acid এবং অক্সালেটে পরিণত হয় এবং বিক্রিয়াটি একমুখী।

অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের অক্সিডেশনের প্রধান পথ হল অ্যাসকরবেট ফ্রি র্যাডিক্যাল (AFR) এবং তারপর ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবেট তৈরির জন্য দুটি ইলেকট্রন অপসারণ করা। AFR-এর দুটি অণু একসঙ্গে বিক্রিয়া করে একটি অ্যাসকরবেট অণু এবং একটি ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবেট অণু তৈরি করে। AFR অন্য যেকোনো ফ্রি র্যাডিক্যাল এর তুলনায় কম প্রতিক্রিয়াশীল তাই অ্যাসকরবেট ফ্রি র্যাডিক্যাল চেইন টার্মিনেটর হিসেবে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে। যেহেতু অ্যাসকরবেট জলীয় তরলে অত্যন্ত দ্রবণীয়, তাই এটি সহজেই টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অ্যাসকরবেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এটি ভিটামিন-ই এর বিজারিত অবস্থা বজায় রাখে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড একটি শক্তিশালী Reducing agent এবং এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং হাইড্রোক্সিলেশন বিক্রিয়ায় কোফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে।
প্রস্তাবিত খাদ্য গ্রহণ:
The UK Panel on Dietary Reference Values for Nutrients 1991 সব বয়সের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য 40mg/day পুষ্টি গ্রহণের সুপারিশ করেছে। USA National Research Council 1989-এর পরামর্শ মতে 60mg/day ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিৎ। উভয় সংস্থাই মহিলাদের গর্ভাবস্থায় 10mg/day এবং স্তন্যপান করানোর সময় মাতৃ দুধে অ্যাসকরবেট মাত্রা বজায় রাখার জন্য মহিলাদের 30-35mg/day ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। UK প্যানেল দ্বারা 6 মাসের বেশি বয়সী শিশুদের 25-30mg/day গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল। মার্কিন কমিটি ধূমপায়ীদের জন্য 100mg/day ভিটামিন সি গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
Similar Contents:
১)ভিটামিন এ এর উৎস,অভাবজনিত রোগ এবং চিকিৎসা২)Lysozyme mechanism | easy and short
Pingback: Vitamin A | Dietary sources, Deficiency and treatment | awesomeBiochem – awesomeBiochem
Pingback: ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ ও চিকিৎসা - awesomeBiochem
Pingback: পরমাণুতে 2d ও 3f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন? ব্যাখ্যা কর। awesomeBiochem - awesomeBiochem
Pingback: শ্বসন কি? কীভাবে CO2 এবং O2 এর পরিবহন ঘটে - awesomeBiochem
Pingback: সাবান প্রস্তুতি সোডিয়াম স্টিয়ারেট বিক্রিয়া সহ awesomeBiochem
Pingback: কোলেস্টেরল কি | কাজ এবং বৈশিষ্ট্য - awesomeBiochem
Pingback: Complications of Vitamin C deficiency – easyBiochem