সাবানঃ উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম লবন(R-COONa) অথবা পটাশিয়াম লবনকেই(R-COOK) সাবান বলা হয়। এখানে R হল ১২-১৮ কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকাইল মূলক। R এর সাধারণ সংকেত CnH2n+1- এবং n এর মান 12 থেকে 18 পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেমনঃ
নাম | সংকেত |
সোডিয়াম স্টিয়ারেট সাবান | C17H35COONa |
পটাসিয়াম স্টিয়ারেট সাবান | C17H35COOK |
সোডিয়াম পামিটেড সাবান | C15H31COONa |
সোডিয়াম অলিয়েট সাবান | C17H33COONa |
সাবানায়নঃ যে প্রক্রিয়ায় তেল বা চর্বিকে ক্ষারের উপস্থিতিতে আদ্রবিশ্লেষণ করে সাবান ও গ্লিসারিনে পরিণত করা হয়, সেই প্রক্রিয়াকে সাবানায়ন বলে।
সাবান প্রস্তুতি:
উচ্চতর ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারিনের ট্রাই এস্টার তরল অথবা কঠিন দুই অবস্থাতে থাকতে পারে। তরল অবস্থায় থাকলে তাকে তেল এবং কঠিন অবস্থায় থাকলে তাকে চর্বি বলে। এই তেল/চর্বির(ট্রাই এস্টার) সাথে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড/কষ্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ[NaOH(aq)] অথবা পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইডের জলীয় দ্রবণ[KOH(aq)] সহযোগে উত্তপ্ত করলে সাবান ও গ্লিসারিন তৈরী হয়। বিক্রিয়া নিম্নরূপঃ

সরাসরি এসিড থেকেও সাবান প্রস্তুত করা যায়ঃ

মিশ্রণ থেকে সাবান পৃথক করাঃ
সাবানায়ন প্রক্রিয়ায় যে সাবান এবং গ্লিসারিনের মিশ্রণ পাওয়া যায় সে মিশ্রণের মধ্যে NaCl যোগ করলে সাবানের অণুগুলো NaCl কে ঘিরে একত্র হয়ে পাত্রের উপরের দিকে কেক আকারে ভেসে ওঠে এবং গ্লিসারিন পাত্রের নিচে জমা পরে, সাবানের এই কেককে সোপ কেক বলে। পরবর্তীতে উপর থেকে সোপ কেক তুলে নেয়া হয়, এর ফলে সাবান এবং গ্লিসারিন পরস্পর থেকে পৃথক হয়।
কিন্তু সাবানকে পৃথক করার পরও সাবানের মধ্যে অতিরিক্ত ক্ষার রয়ে যায়। এই অতিরিক্ত ক্ষারকে কমানোর জন্য সাবানটিকে দুই থেকে তিন দিন রেখে দেওয়া হয় এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক মাস বা তারও বেশি সময় সংরক্ষণ করা হয়। এর পর সাবানের সাথে প্রয়োজনীয় সুগন্ধি, রং, এবং অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ছাঁচে ঢেলে বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে বাজারজাত করা হয়।
সাবানায়ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লিসারিন উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়, যেটি সাবানে উপস্থিত থেকে সাবানকে মোলায়েম করতে কাজ করে, অথবা মিশ্রণ থেকে আলাদা করে অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়।
কিভাবে সাবান ময়লা পরিষ্কার করেঃ
সবানের দুটি প্রান্ত থাকে। একটি হাইড্রোফিলিক প্রান্ত (পোলার প্রান্ত) যা পানির অণুর সাথে আবদ্ধ হতে পারে এবং আরেকটি হাইড্রোফোবিক প্রান্ত (অপোলার প্রান্ত) যা তেল বা চর্বির সাথে যুক্ত হয়। পোলার এবং অপোলার দুটি বৈশিষ্ট্যই থাকার কারণে সাবান ইমালসিফায়ার হিসেবে কাজ করে। যখন কাপড়ের মধ্যে লেগে থাকা তেল, চর্বি বা ময়লা সাবানের পানির সংস্পর্শে আসে তখন সাবানের অণুগুলো ময়লাকে ঘিরে ময়লার চারপাশে গুচ্ছের মত তৈরী করে যাকে বলে মাইসেলি। ময়লা বা তেল, চর্বির অণুগুলো হলো অপোলার। সাবান এই পোলার ও অপোলার অণুর মধ্যে ব্রিজ হিসেবে কাজ করে। সাবানের হাইড্রোফিলিক প্রান্ত বাইরের দিকে পানির অণুর সাথে যুক্ত হয়ে মাইসেলির বাইরের পৃষ্ঠ গঠন করে। আর হাইড্রোফোবিক প্রান্ত অপোলার তেল/চর্বির সাথে যুক্ত হয়ে ময়লা বা তেল/চর্বি কে কেন্দ্রে আটকে ফেলে। যখন কাপড়কে পানি দিয়ে ধৌত করা হয় তখন সাবানের পোলার অংশ পানির সাথে ধুয়ে চলে যায় আর সাথে আটকে থাকা ময়লাকেও নিয়ে যায়। এভাবে সাবান ময়লা পরিষ্কার করে।
আমরা যখন গরুর মাংস খাই তখন হাতে লেগে থাকা চর্বি শুধু পানি দিয়ে ধুলে কিন্তু যায় না। সাবান ব্যবহার করলে সহজেই চর্বি ঘুয়ে যায়।
ঠান্ডা পানির তুলনায় গরম পানি দিয়ে চর্বিযুক্ত হাত ধৌত করা বেশি সহজ হয়। কারণ পানি গরম হওয়াতে তাপমাত্রার কারণে চর্বি বা তেল গলে নরম হয়ে যায়। তখন সাবানের হাইড্রোফোবিক প্রান্ত সহজেই যুক্ত হতে পারে এবং ধুয়ে ফেললে সহজেই চর্বি পরিষ্কার হয়ে যায়।
Similar contents:
1.রাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে যায় কেন?
2.সেক্স হরমোন কি। তৈরী এবং রেগুলেশন
4.ব্যাপন ও নিঃসরনের মধ্যে পার্থক্য
.
Pingback: Sc ও Zn অবস্থান্তর মৌল নয় কেন? | simple and easy | awesomeBiochem – awesomeBiochem
Pingback: পরমাণুতে 2d ও 3f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন? ব্যাখ্যা কর। awesomeBiochem – awesomeBiochem
Pingback: সাবানের সংকেত এবং প্রকারভেদ - awesomeBiochem
Pingback: পরমাণুতে 2d ও 3f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
Pingback: Why Zn is not transition element - awesomeBiochem