প্রশ্নঃ তরল ও জলীয় দ্রবণ এর মধ্যে পার্থক্য কী?

জলীয় দ্রবণ
কোনো দ্রাবকের মধ্যে কোনো দ্রব মিশ্রিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে সে মিশ্রণকে দ্রবণ বলে। যেমন পানির মধ্যে চিনি মিশ্রিত করা হলে শরবত তৈরী হয়, অর্থাৎ শরবত হলো একটি মিশ্রণ। সুতরাং,
পানি(দ্রাবক) + চিনি(দ্রব) = শরবত(দ্রবণ)
তাহলে দ্রব তাকেই বলা হবে যে দ্রবীভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে চিনি দ্রবীভূত হয় পানির মধ্যে তাই চিনি হলো দ্রব।
অনুরুপভাবে, দ্রাবক হলো সে যার মধ্যে দ্রব দ্রবীভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে পানির মধ্যে যেহেতু চিনি দ্রবীভূত হতে পারে সেহেতু পানি হলো দ্রাবক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে জলীয় দ্রবণ কী?
যদি কোনো দ্রব বা পদার্থ(কঠিন বা তরল) পানি সমেত উপস্থিত থাকে তাকে ঐ পদার্থের জলীয় দ্রবণ বলে। যেমন আমরা জানি খাবার লবণ (NaCl) একটি কঠিন দানাদার পদার্থ কিন্তু লবণ যখন পানির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে তখন সে মিশ্রণ কে বলা হয় লবণের জলীয় দ্রবণ। একইভাবে পানির সাথে চিনির মিশ্রণকে বলা যায় চিনির জলীয় দ্রবণ। অর্থাৎ জলীয় দ্রবণের ক্ষেত্রে দ্রাবক হিসেবে পানির উপস্থিতি থাকতে হবে। আরো বলা যায় HCl এর জলীয় দ্রবণ বা NaOH এর জলীয় দ্রবণ- তার মানে HCl, NaOH হলো দ্রব আর দ্রাবক হিসেবে আছে পানি। দুই ধরণের উপাদান আছে – এক যারা সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে। এদেরকে বলা হয় হাইড্রোফিলিক। আরেক হচ্ছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় না। এদেরকে বলা হয় হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফোবিক পদার্থকে পানির সাথে মেশানো হলে তলানি আকারে পাত্রের তলদেশে জমা পরে। জলীয় দ্রবণে শক্তিশালী বা দুর্বল দুই ধরণের ইলেকট্রোলাইট থাকে এবং এরা বিদ্যুৎ পরিবহন করে। দুর্বল ইলেকট্রোলাইটের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা কম। সকল ধরণের আয়নিক যৌগ ডাইপোল তৈরির মাধ্যমে পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল সমযোজী যৌগ পানিতে অদ্রবনীয়। ব্লিচ, রক্ত, রং, দুধ জলীয় দ্রবণের আরো কিছু উদাহরণ।
তরলঃ
অপরদিকে, তরল হলো পদার্থের তিনটি অবস্থার মধ্যে একটি অবস্থা। তরলের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে কঠিন ও গ্যাসের থেকে আলাদা করে। তরলের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রবাহিত হতে পারে। অর্থাৎ একটি পাত্রে পানি নিয়ে যদি উঁচু নিচু মেঝেতে ঢেলে দেয়া হয় দেখা যাবে উঁচু জায়গা থেকে নিচু যায়গায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো তরলকে যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের আকৃতি ধারণ করবে। তরলের তকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল এর পৃষ্ঠ টান। তরলের ঘনত্ব গ্যাসের তুলনায় বেশি হয়। তরল পদার্থের অণুগুলো কাছাকাছি অবস্থান করে এবং তরলের কণাগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিনের তুলনায় কম বিধায় কণাগূলো গতিশীল অবস্থায় থাকে। কণার গতিত্বের আলোকে তরল অবস্থার ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। চাপ প্রয়োগে তরলকে সংকুচিত করা যায় না। তাপ প্রয়োগ করা হলে এর কনাগুলোর আন্তঃআনবিক আকর্ষণ কমে যায় এবং আরো বেশি গতিশীল হয়। কাজেই তাপ প্রয়োগে তরলের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
কাজেই পানি একটি তরল পদার্থ আর এই তরল পানির সাথে কোনো পদার্থের মিশ্রণ হলো জলীয় দ্রবণ।তরল অবস্থা বোঝাতে পদার্থের পাশে (l) লেখা থাকে আর জলীয় দ্রবণ বোঝাতে পদার্থের পাশে (aq) লেখা থাকে। যেমনঃ
HCl(l) → তরল অবস্থা
HCl(aq) → জলীয় দ্রবণ
Related Contents:
BF3 সমযোজী নাকি আয়নিক ব্যাখ্যা কর।
নিঃসরণ ও ব্যাপনের মধ্যে পার্থক্য।
তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থের ব্যাপন পরীক্ষা।