কোলেস্টেরল কি
কোলেস্টেরল শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন গ্রীক কোলে (Chole) এবং স্টেরিওস (Stereos) এ দুটি শব্দ থেকে। Chole শব্দের অর্থ পিত্ত আর Stereos শব্দের অর্থ কঠিন। শব্দ দুটির পরে অ্যালকোহল এর রাসায়নিক মূলক অল (ol) যুক্ত হয়ে নাম হয়েছে কোলেস্টেরল। François Poulletier de la Salle প্রথম 1769 সালে পিত্তথলিতে শক্ত আকারে কোলেস্টেরল শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে 1815 সালে রসায়নবিদ মিশেল ইউজিন শেভরুল যৌগটিকে “কোলেস্টেরিন (Cholesterine)” নাম দেন।
কোলেস্টেরল হলো একটি পরিবর্তিত স্টেরয়েড যা এক প্রকারের লিপিড। এর রাসায়নিক সংকেত হলো C27H46O । কোলেস্টেরলের IUPAC নাম Cholest-5-en-3beta-ol. কোলেস্টেরল প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়ের জন্যই অপরিহার্য। কোলেস্টেরল সমস্ত প্রাণী কোষ দ্বারা সংশ্লেষিত হয় এবং এটি প্রাণীর কোষ ঝিল্লির একটি অপরিহার্য কাঠামোগত উপাদান । সমস্ত প্রাণী কোষের ঝিল্লির প্রায় ৩০% গঠন করে কোলেস্টেরল।
কোলেস্টেরল এর মাত্রাঃ
68 কেজি ওজনের একজন সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষ প্রতিদিন প্রায় 1 গ্রাম (1,000 মিলিগ্রাম) কোলেস্টেরল তৈরী করে এবং তার শরীরে প্রায় 35 গ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যার বেশিরভাগই থাকে কোষ ঝিল্লিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন স্বাভাবিক পুরুষের জন্য দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের মাত্রা 307 মিলিগ্রাম।
আমাদের গৃহীত বেশিরভাগ কোলেস্টেরল এস্টারিফাইড হয়, যার কারণে এটি অন্ত্রে খারাপভাবে শোষিত হয়। শরীর তার নিজস্ব কোলেস্টেরল সংশ্লেষণ কমিয়ে ইনজেস্টেড কোলেস্টেরল শোষণ করা শুরু করে। এর ফলে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাওয়ার ৭-১০ ঘন্টার মধ্যে রক্তে কোলেস্টেরলের ঘনত্বের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়।
গাছপালা খুব অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল তৈরি করে। তারা বেশি পরিমাণে ফাইটোস্টেরল তৈরি করে। ফাইটোস্টেরল রাসায়নিকভাবে কোলেস্টেরলের অনুরূপ।

কোলেস্টেরলের বৈশিষ্ট্যঃ
- ভর 386.65 g/mol
- সাদা স্ফটিক পাউডার
- গলনাঙ্ক 148-150 ডিগ্রী সেলসিয়াস
- স্ফুটনাঙ্ক 360 ডিগ্রী সেলসিয়াস
- ঘনত্ব 1.052 g/cm3
- দ্রাব্যতাঃ অ্যাসিটোন , বেনজিন , ক্লোরোফর্ম , ইথানল , ইথার , হেক্সেন , আইসোপ্রোপাইল মাইরিস্টেট , মিথানলে দ্রবণীয়
কোলেস্টেরলের প্রকারভেদঃ
কোলেস্টেরল রক্তের মাধ্যমে “লিপোপ্রোটিন” বা লাইপোপ্রোটিন নামক প্রোটিনের মাধ্যমে ভ্রমণ করে। দুই ধরনের লিপোপ্রোটিন সারা শরীরে কোলেস্টেরল বহন করে: যথাঃ
- LDL (Low Density Lipoprotein)
- HDL (High Density Lipoprotein)
LDL কে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয় কারণ LDL রক্তনালী গুলোতে জমা হয়ে প্ল্যাক তৈরী করে। এতে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয় যার ফলে বুকে ব্যাথা কিংবা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
অন্যদিকে HDL কে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয় কারণ এটি যকৃতে কোলেস্টেরল নিয়ে যায় এবং রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমায়।
কোলেস্টেরল এর কাজঃ
- কোষ ঝিল্লির কাঠামো গঠন
- ভিটামিন ডি তৈরির অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে
- স্টেরয়েড হরমোন, পিত্ত এসিড এর জৈব সংশ্লেষণ করে
- কোষ ঝিল্লির অখন্ডতা বজায় রাখে
- পরিপাকে সহায়তা করে
- সেক্স হরমোন তৈরিতে কাজ করে
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
- ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
Similar content:
1.কোলেস্টেরল কেন বাড়ে। বাড়লে কি হয় এবং প্রতিরোধ
2.Steps of Nitrogen cycle | short and easy
3.সেক্স হরমোন কি | তৈরী এবং রেগুলেশন
Pingback: কোলেস্টেরল বাড়ে কেন | এর প্রতিরোধ কি কি - awesomeBiochem