BF3 সমযোজী নাকি আয়নিক?
BF3 সমযোজী নাকি আয়নিক বন্ধনে আবদ্ধ এই প্রশ্নটা কম বেশি সব শিক্ষার্থীরই থাকে। দেখা গেছে কোনো জায়গায় আয়নিক বলা আবার কোনো কোনো জায়গায় সমযোজী বলা। একই রকম সমস্যা BeCl2 এর বেলায়ও। BF3 এবং BeCl2 আসলে সমযোজী নাকি আয়নিক এটা নিয়ে কনফিউশন থেকেই যায়।
প্রকৃতপক্ষে BF3 সমযোজী যৌগ। বলা যেতে পারে এটি এক ধরণের ব্যতিক্রম। বোরন(B) আসলে প্রকৃত ধাতু নয়, এটিকে মেটালয়েড (Metalloid) বা অপধাতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মেটালয়েড এর কিছু ধাতব ধর্ম থাকে কিছু অধাতব ধর্ম থাকে। গ্রুপ ১৩ তে অবস্থিত একটিই মেটালয়েড আছে সেটি হলো বোরন।

আমরা যদি বোরন এর ইলেকট্রন বিন্যাসের দিকে লক্ষ্য করি,
B(5)= 2 , 3
এখানে মনে হতে পারে B ৩টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে B3+ হয়ে যাবে এবং দুই এর নিয়ম পূরণ করবে। আর ত্যাগকৃত ৩টি ইলেকট্রন ৩টি ফ্লোরিন(F) গ্রহণ করে BF3 আয়নিক বন্ধন তৈরী করবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমনটি ঘটে না। কারণ বোরন এর পারমাণবিক আকার ছোট হওয়ায় এর আয়নিকরণ শক্তি অত্যন্ত বেশি। ফলে বোরন এর শেষ কক্ষপথের ৩টি ইলেকট্রন ছেড়ে দিতে অনেক শক্তির প্রয়োজন যা বোরন এর পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব হয় না। কাজেই বোরন ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারে না। আর ইলেকট্রন আদান-প্রদান না হলে আয়নিক বন্ধন ও সম্ভব নয়।
আবার যদি তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য বিবেচনা করা হয় তবে,
B(বোরন) এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা = 2.0
F(ফ্লোরিন) এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা = 4.0
এদের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য (4.0-2.0) = 2.0
আমরা জানি দুটি মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য 1.9 এর বেশি হলে তারা আয়নিক বন্ধন তৈরী করে। কাজেই B এবং F এর মধ্যে আয়নিক বন্ধন হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে শুধুমাত্র তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য দিয়ে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আসে না।
আবার ফাজানের নীতি অনুসারে ক্যাটায়নের আকার যত ছোট হবে এবং চার্জ যত বেশি হবে যৌগটির পোলারায়ন তত বেশি হবে। আর পোলারায়ন যত বেশি হবে যৌগটির সমযোজী ধর্ম তত বৃদ্ধি পাবে কারণ পোলারায়নের ফলে ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয় ফলে ইলেকট্রন শেয়ার করে। সুতরাং BF3 একটি সমযোজী যৌগ।
B এবং F এর সমযোজী যৌগ গঠনঃ
B | 1s2 2s2 2px1 |
B* | 1s2 2s1 2px1 2py1 |
F | 1s2 2s2 2px2 2py2 2pz1 |
বোরন কে উত্তেজিত করা হলে এর শেষ কক্ষপথে বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা হয় ৩টি। অর্থাৎ উত্তেজিত অবস্থায় বোরন এর যোজনী ৩। অপরদিকে ফ্লোরিন এর শেষ কক্ষপথে বিজোড় ইলেকট্রন ১টি তাই ফ্লোরিন এর যোজনী ১। বোরন ৩টি ইলেকট্রন ৩টি ফ্লোরিনের সাথে শেয়ার করে BF3 সমযোজী যৌগ গঠন করে। এখানে sp2 সংকরায়ন ঘটে।

তাহলে কি বোরন এর অষ্টক পূরণ হলো?
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, BF3 যৌগটিতে ৩ জোড়া ইলেকট্রন শেয়ার হয়। এক্ষেত্রে বোরন এর শেষ কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা হয় ৬টি আর প্রতিটি ফ্লোরিনের ৮টি করে। অর্থাৎ বোরন অষ্টক পূরণ না করে ৬টি ইলেকট্রন দিয়েই যৌগ গঠন করেছে। এ অবস্থাকে বলা হয় অষ্টক সংকোচন। এটি অষ্টক নিয়মের ব্যতিক্রম। অর্থাৎ BF3 অষ্টক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটায়। অনুরূপভাবে অষ্টক সম্প্রসারণ ও হতে পারে যেখানে শেষ কক্ষপথে ৮টির বেশি ইলেকট্রন দিয়ে যৌগ গঠিত হয়। অষ্টক সম্প্রসারণ এর উদাহরণ হলো PCl5, SF6, IF7 ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে BeCl2 ও সমযোজী যৌগ। এখানে Be ধাতু এবং Cl অধাতু। নিয়ম মোতাবেক ধাতু-অধাতু আয়নিক যৌগ গঠন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে Be ক্যাটায়নের আকার অনেক ছোট এবং চার্জ বেশি আর Cl অ্যানায়নের আকার বড়। তাই ফাজানের নীতি অনুযায়ী BeCl2 এর পোলারায়ন বেশি হবে ফলে এর সমযোজী ধর্ম ও আয়নিকের তুলনায় বেশি হবে।
আবার তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য খেয়াল করলে, এদের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য হয় 1.4 যা 1.9 থেকে কম। তাই এরা সমযোজী বন্ধন তৈরী করবে। কাজেই BeCl2 একটি সমযোজী যৌগ।
নিচে আরো কিছু যৌগের উদাহরণ দেয়া হলো যাদের দেখতে আয়নিক মনে হলেও আসলে সমযোজী:
BeF2 | সমযোজী |
BeO | সমযোজী |
AlCl3 | সমযোজী |
BCl3 | সমযোজী |
NH3 | সমযোজী |
HCl | সমযোজী |
Similar contents:
সাবানের সংকেত ও প্রকারভেদ – awesomebiochem
তরল ও জলীয় দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য কি?
Pingback: তরল ও জলীয় দ্রবণের পার্থক্য কী? - awesomeBiochem
Pingback: NH3 ও PH3 কোনটি অধিক ক্ষারীয় | Short & Easy