বায়ু দূষণের ১০টি কারণ-প্রতিকার পয়েন্ট আকারে
বায়ু দূষণের ১০টি কারণ নিম্নরূপঃ
বায়ু দূষণ প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই হয়ে থাকে। এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণই বেশি দায়ী। প্রাকৃতিক যে কারণগুলো বায়ু দূষণের জন্য দায়ী তার মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বায়ু ক্ষয়, বনের আগুন, পরাগ বিচ্ছুরণ, প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা এবং জৈব যৌগের বাষ্পীভবন। নিম্নে বায়ু দূষণের ১০টি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলঃ
- Stationary source: এর মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্ল্যান্ট, বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা, বিভিন্ন ধরণের চুল্লি, জ্বালানী গরম করার ডিভাইস, waste incinerators ইত্যাদি। এগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়ার স্তুপ তৈরী হয় যা উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোর প্রধান বায়ু দূষণের কারণ। কাঠ, ফসলের বর্জ্য এবং গোবর পোড়ানোর ফলেও প্রচুর বায়ু দূষণ ঘটে।
- Mobile source: এর মধ্যে রয়েছে মোটর গাড়ি, সামুদ্রিক জাহাজ, বিমান ইত্যাদি। এগুলো থেকে বায়ু দূষণের পাশাপাশি শব্দ দূষণও ঘটে। এসব যানবাহন থেকে কার্বন মনোক্সাইড (CO) নির্গত হয়। কার্বন মনোক্সাইড একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং বিষাক্ত গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা বা কাঠ এর অসম্পূর্ণ দহণেও CO তৈরী হয়।
- রঙ, হেয়ার স্প্রে, অ্যারোসল স্প্রে, বার্নিশ এবং এ জাতীয় অন্যান্য দ্রাবক থেকে নির্গত গ্যাস বায়ু দূষণ করে।
- যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা বায়ু দূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র দেশগুলোতে বর্জ্য অপসারণের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা না থাকায় দেখা যায় বসতির আশে পাশেই বর্জ্যের স্তুপ তৈরী হয়। এগুলো মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। মিথেন বিষাক্ত এবং অতীব দাহ্য গ্যাস যা বাতাসের সাথে বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরী করতে পারে। আবার মিথেনের অসম্পূর্ণ দহণে কার্বন মনোক্সাইড তৈরী হয় যা আরেকটি বিষাক্ত গ্যাস।
- Military source: সামরিক যুদ্ধ, জীবাণু যুদ্ধ, পারমাণবিক অস্ত্র, রকেট ইত্যাদি থেকে বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং বায়ু দূষণ ঘটায়।
- দাবানল বায়ু দূষণের অন্যতম আরেকটি প্রধান কারণ।
- পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় থেকে উৎপন্ন রেডন গ্যাস বায়ু দূষনের আরেকটি কারণ। রেডিয়াম ধাতুর ক্ষয় থেকে এই তেজস্ক্রিয় গ্যাসটি উৎপন্ন হয়। রেডন একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন, naturally occurring তেজষ্ক্রিয় গ্যাস। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। রেডন গ্যাস বিল্ডিংগুলিতে জমা হতে পারে, বিশেষ করে বেসমেন্টের মতো সীমাবদ্ধ এলাকায়। রেডন গ্যাসকে ফুস্ফুস ক্যান্সারের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- গরমের দিনে গাছপালা কিছু অঞ্চলে পরিবেশগতভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে VOC নির্গত করে। এই VOC গুলো প্রাইমারী এনথ্রোপোজেনিক পোলুটেন্ট যেমন NOx, SO2 ইত্যাদির সাথে বিক্রিয়া করে গৌণ দূষণকারী পদার্থ তৈরী করে যারা বায়ু দূষণ ঘটায়। বায়ু দূষণের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।
- Volcanic activity যা সালফার, ক্লোরিন এবং অ্যাশ পারটিকুলেট উৎপন্ন করে।
- গাছপালা বিহীন বিশাল এলাকা বা জমি থেকে ধুলো বায়ু দূষণের আরেকটি বড় কারণ।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়ঃ
বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা সবসময়ই একটি চেলেঞ্জিং ব্যাপার। এই প্রতিরোধ পদ্ধতিগুলো হয় সরকার (আইন) থেকে অথবা ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে আসতে পারে।
সরকার (বা সম্প্রদায়) স্তরের প্রতিরোধঃ
- বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যে সবুজ শক্তি (green energy) প্রবর্তনের মাধ্যমে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এখন বায়ু শক্তি, সৌর শক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জ্বালানী পোড়ানো হ্রাসকরণ ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করছে।
- বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি গুলোর কার্যক্রম এখনো বায়ু দূষণ ঘটিয়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পানির কার্যক্রম এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- সরকারিভাবে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
- ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান এবং ময়লা অপসারণের সুব্যবস্থা তৈরী করতে হবে।
- বর্জ্য রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করতে হবে।
- বর্তমানে শক্তি সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরী হচ্ছে যা বায়ু দূষণ আগের থেকে কম করে।
ব্যক্তিগত স্তরের প্রতিরোধঃ
- যাতায়াতের সময় পরিবারকে বাস, ট্রেন বা বাইক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এতে রাস্তায় কম গাড়ি থাকবে এবং কম ধোঁয়া তৈরী হবে। ইউরোপে বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হল সড়ক পরিবহন। জানা যায়, যানবাহনের নিষ্কাশিত ধোয়ার কারণে প্রতি বছর ইউরোপে ৫০০০ মানুষ ফুস্ফুস ক্যান্সার এবং হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে।
- বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারে সচেতন এবং মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রচুর জ্বালানী পোড়াতে হয়। তাই বিদ্যুতের অপচয় কমানো গেলে বায়ু দূষণও কমানো সম্ভব হবে।
- রিসাইকেল এবং রি-ইউজ এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন প্লাস্টিক, পলিথিন, কাপড়, ব্যাগ, কাগজ, বোতল ইত্যাদি জিনিসগুলো পুনঃব্যবহার করা যেতে পারে। এতে নতুন জিনিস তৈরির উপর নিরভরশীলতা কমবে।
- নিজেদেরকে সচেতন এবং সরকারি নিরদেশনা পালনে সচেষ্ট হতে হবে।
উপসংহারঃ
বায়ু দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে কেবল যদি ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করা বন্ধ করে। এর জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে নিয়ম তৈরী করতে হবে এবং ব্যক্তিগত ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
Similar contents:
কোলেস্টেরল বাড়ে কেন | এর প্রতিরোধ কি কি