লোহিত রক্ত কণিকা (RBC):
লোহিত রক্ত কণিকা(Red Blood Cell) বা এরিথ্রোসাইট, প্রাথমিকভাবে হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে অক্সিজেন বহন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে। হিমোগ্লোবিন হল একটি আয়রনযুক্ত প্রোটিন যা লাল রক্তকণিকাকে তাদের রঙ দেয়। রক্তের তিন ধরণের কণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যা মোট আয়তনের প্রায় 40-45%। লোহিত রক্তকণিকাগুলি বৃত্তাকার, দ্বিকোষীয়, ডিস্ক-আকৃতির এবং বিকৃত হয় যাতে সেগুলি সরু কৈশিকজালিকার মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এদের নিউক্লিয়াস থাকে না। লোহিত রক্ত কণিকা অন্যান্য কোষের তুলনায় অনেক ছোট।
হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল এর লাল অস্থি মজ্জা থেকে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরী হয়। অস্থিমজ্জা থেকে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির প্রক্রিয়াটি এরিথ্রোপয়েসিস নামে পরিচিত।
প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 2.4 মিলিয়ন RBC উৎপন্ন হয়। প্রতি ঘন মিলিমিটার এ স্বাভাবিক RBC সংখ্যা 4.5 থেকে 5 মিলিয়ন পর্যন্ত হয়ে থাকে। RBC এর গড় আয়ু প্রায় 100-120 দিন। RBC কোষগূলোর জীবনকাল পূর্ণ হলে এরা বিনষ্ট হয় এবং প্লীহার(spleen) মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ থেকে সরানো হয়।
স্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা লিঙ্গ ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। পুরুষদের প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা ৪.৭ থেকে ৬.১ মিলিয়ন হয়ে থাকে। নারীদের দেহে প্রতি মিক্রোলিটারে ৪.২ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন হয়ে থাকে। আর শিশুদের দেহে প্রতি মাইক্রোলিটারে RBC সংখ্যা ৪.০ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন হয়ে থাকে। যদি কারো দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা নরমাল রেঞ্জ এর বাইরে থাকে তাহলে হয় কম আছে অথবা বেশি আছে।
যে কারণে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক থেকে বেশি হয়ঃ
- ধূমপান এর অভ্যাস থাকলে
- স্টেরয়েড সেবন করলে
- ডিহাইড্রেশন
- হৃদপিণ্ড অথবা ফুসফুসের রোগ থাকলে
যেসব কারণে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়ঃ
- ভিটামিনের অভাব (B9, B12)
- আয়রনের অভাব
- অপুষ্টি
- কেমোথেরাপি
দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে গেলে রক্তশূণ্যতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। আবার যদি লোহিত কণিকার সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যায় তখন সে অবস্থাকে পলিসাইথেমিয়া বলা হয়। পলিসাইথেমিয়া পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়
যেসব খাবার লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়ঃ
ভিটামিন বি৯ ও বি১২ সমৃদ্ধ খাবার এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ
- গরুর মাংস
- কলিজা
- শাকসবজি যেমন কলমি শাক
- মশুর ডাল
- মটরশুটি
- বাদাম
- বেরি
কাজঃ
লোহিত রক্ত কণিকার কাজ হলো ফুসফুস থেকে টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহন এবং টিস্যু থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন।
শ্বেতরক্ত কণিকা (WBC):
শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট হল ইমিউন সিস্টেমের কোষ যা সংক্রামক রোগ এবং বিদেশী উপাদান উভয়ের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে সক্ষম।
শ্বেতরক্ত কণিকা হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল থেকে তৈরী হয়।
রক্ত এবং লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম সহ সারা শরীরে শ্বেতরক্ত কণিকা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা রয়েছে যা মানুষের ইমিউন সিস্টেমে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। প্রতি মাইক্রোলিটারে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা 4,000 থেকে11,000 হয়ে থাকে। মোট রক্তের পরিমাণের প্রায় 1% শ্বেতরক্ত কণিকা গঠন করে।
সাইটোপ্লাজমে কণিকাগুলির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে শ্বেত রক্তকণিকাগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: গ্রানুলোসাইট এবং অ্যাগ্রানুলোসাইট। গ্রানুলোসাইটের মধ্যে রয়েছে বেসোফিল, ইওসিনোফিল, নিউট্রোফিল এবং মাস্ট কোষ। অ্যাগ্রানুলোসাইটের মধ্যে রয়েছে লিম্ফোসাইট এবং মনোসাইট।
কাজঃ
- নিউট্রোফিলস : ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং বিদেশী ধ্বংসাবশেষ মেরে সংক্রমণ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- লিম্ফোসাইট : ভাইরাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য টি কোষ, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ এবং বি কোষ নিয়ে গঠিত এবং আপনাকে সংক্রমণের (অ্যান্টিবডি) বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করার জন্য প্রোটিন তৈরি করে।
- ইওসিনোফিলস : পরজীবী, ক্যান্সার কোষ সনাক্ত এবং ধ্বংস করে এবং আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার সাথে বেসোফিলকে সহায়তা করে।
- বেসোফিলস : কাশি, হাঁচি বা সর্দির মতো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
- মনোসাইটস : ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি পরিষ্কার করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষা করে।
যে কারণে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়ঃ
- এপ্লাস্টিক এনিমিয়া
- লিউকেমিয়া
- কেমোথেরাপি
- ভিটামিনের অভাব (বি১২)
- এইডস
যে কারণে শ্বেত রক্ত কণিকা বেড়ে যায়ঃ
- রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস
- ভাইরাল ইনফেকশন
- যক্ষ্মা
- স্ট্রেস
- লিউকেমিয়া
- Hodgkins disease
- এলারজি
দেহে শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা কমে গেলে সে অবস্থাকে বলে লিউকোপেনিয়া, আর শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বেশি হলে সে অবস্থা হল লিউকোসাইটোসিস।
অণুচক্রিকা(Platelet):
অণুচক্রিকা বা Platelet বা থ্রম্বোসাইট কোষগুলো খুব ছোট, অনিয়মিত আকারের এবং ব্যাস 2-3 µm হয়ে থাকে। এদের নিউক্লিয়াস থাকে না।
অণুচক্রিকা মেগাক্যারিওসাইটের বিভাজন থেকে উদ্ভূত হয়।
একটি প্লেটলেটের গড় আয়ু সাধারণত মাত্র 5 থেকে 9 দিন। অণুচক্রিকাগুলো দেহ বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে ভুমিকা পালন করে। অণুচক্রিকা রক্তে সঞ্চালিত হয় এবং হিমোস্ট্যাসিস এ ভুমিকা রাখে যা মূলত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অণুচক্রিকাগুলো জালের মত এক ধরণের ফাইবার তৈরী করে যা পরবর্তীতে ক্ষত স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে।
প্রতি ঘন মিলিমিটারে অণুচক্রিকার সংখ্যা 150,000 থেকে 450,000 হয়ে থাকে।
যে কারণে অণুচক্রিকা কমে যায়ঃ
- কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশন থেরাপি
- ভাইরাল ইনফেকশন
- হেপাটাইটিস সি
- লুপাস
- গর্ভাবস্থা
- এন্টিকোয়াগুলেন্ট মেডিসিন যেমন Heparin or Warfarin
যে কারণে অণুচক্রিকা বেড়ে যায়ঃ
- থ্রোম্বোসাইটোসিস
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ
- ইনফেকশন
- আয়রনের অভাব
- প্লীহা অপসারণ
- ক্যান্সার
প্লেটলেটের সংখ্যা খুব কম হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এবং প্লেটলেটের সংখ্যা খুব বেশি হলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে ফলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে এবং স্ট্রোক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, পালমোনারি এমবোলিজম বা শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।



Similar contents:
পেঁয়াজ কোষ পর্যবেক্ষণ এবং স্লাইড তৈরীরটিফার কী? ভিডিও সহ
Buy Microscopes: Top 5 best microscopes for kids under $50
Pingback: পেঁয়াজ কোষ পর্যবেক্ষণ এবং স্লাইড তৈর - awesomeBiochem
Pingback: Top 5 best microscopes for kids under $50 in 2022
Pingback: Blood under microscope – easyBiochem